ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিশেষজ্ঞদের মতামত

মার্কিন ভিসানীতিতে ভয়ের ক্ষেত্র সীমিত

আরো স্যাংশনস দেবে, দিতে পারে, এটা তাদের ইচ্ছা : প্রধানমন্ত্রী
মার্কিন ভিসানীতিতে ভয়ের ক্ষেত্র সীমিত

বাংলাদেশে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট যে ভিসানীতি কার্যকর করেছে, সেটি নিয়ে ভীত হওয়ার ক্ষেত্র সীমিত বলেই মতামত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, তত্ত্বাবধয়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায় হয়নি। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে ছিল না। অনেকটা কাকতালীয়ভবে ভোটের আগে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি দিয়েছে। সূত্র জানায়, মার্কিন  ভিসানীতি বাংলাদেশে তেমন প্রভাব ফেলতে পারবে না। সরকার সঠিক সময়ে ভোট করবে। মার্কিন ভিসানীতির কারণে ব্যবসায়িকভাবে বাংলাদেশ তেমন একটা ক্ষতির মুখে পড়বে না। কেন না, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা করোনাকালেও ভালোভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পেরেছেন।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক, ভিসানীতি ও নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হবে- এটা আমাদেরই দাবি ছিল। আন্দোলন করে আমরাই সেটা প্রতিষ্ঠিত করেছি। আজকে এখন তারা স্যাংশনস দিচ্ছে, আরো স্যাংশনস দেবে। দিতে পারে। এটা তাদের ইচ্ছা। আমাদের দেশের মানুষের যে অধিকার, সব মৌলিক অধিকারগুলো আমরাই নিশ্চিত করেছি। মানুষের সব রকমের মৌলিক অধিকার আমরাই নিশ্চিত করেছি। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল, বাংলাদেশ কিন্তু বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।’ ভয়েস অব আমেরিকার শতরূপা বড়ুয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে শতরূপা বড়ুয়া প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন- বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নির্বাচন, মানবাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে নিয়মিত তাগিদ দিয়ে আসছিল। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ভিসানীতি কার্যকরে প্রথম পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছে। ২০২১ সালে র‌্যাবের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল, তা এখনো বহাল আছে। এ ইস্যুগুলো অ্যাড্রেস করাসহ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা নিয়ে আপনারা কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন? জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার এটাই প্রশ্ন যে হঠাৎ কথা নেই, বার্তা নেই তারা আমাদের ওপর ভিসা স্যাংশনস দিতে চাচ্ছে কী কারণে? মানবাধিকারের কথা যদি বলেন বা ভোটের অধিকারের কথা যদি বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ, আমরাই তো এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করেছি। আমাদের কত মানুষ রক্ত দিয়েছে এই ভোটের অধিকার আদায় করার জন্য। অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে হয়, সেজন্য যত রকম সংস্কার দরকার, সেটা আমরাই তো করেছি। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিসহ ভোটার তালিকা, মানুষকে ভোটের অধিকার নিয়ে সচেতন করার কাজ-তো আমরাই করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব- এ স্লোগান তো আমারই দেওয়া। আমি এভাবে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছি। সেক্ষেত্রে হঠাৎ এ ধরনের একটা স্যাংশনস দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না।’

র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, র‌্যাব হোক, পুলিশ হোক বা যেটাই হোক, কেউ যদি কোনো রকম অন্যায় করে আমদের দেশে কিন্তু তার বিচার হয়। এ বিচারে কেউ কিন্তু রেহাই পায় না। অনেক সময় কোনো কাজ তারা অতিরিক্ত করে, করলে সেটা আমাদের দেশের আইনেই কিন্তু বিচার হচ্ছে। যেখানে এরকম বিচার হচ্ছে, সেখানে এ স্যাংশন কী কারণে? ওই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হবে এটা আমাদেরই দাবি ছিল। আন্দোলন করে আমরাই সেটা প্রতিষ্ঠিত করেছি। আজকে এখন তারা স্যাংশনস দিচ্ছে, আরো স্যাংশনস দেবে। দিতে পারে। এটা তাদের ইচ্ছা। আমাদের দেশের মানুষের যে অধিকার, সব মৌলিক অধিকারগুলো আমরা নিশ্চিত করেছি। মানুষের সব রকমের মৌলিক অধিকার আমরাই নিশ্চিত করেছি। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল, বাংলাদেশ কিন্তু বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমাদের ভিসানীতির ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখিয়েও লাভ নেই। নিষেধাজ্ঞা দেয় ওয়াশিংটন, ভয় দেখান মির্জা ফখরুল। নিষেধাজ্ঞাকে ভয় করলে বঙ্গবন্ধু এদেশ স্বাধীন করতে পারতেন না। নিষেধাজ্ঞাকে কেউ ভয় করলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, সোনালি অর্জন সেগুলো হতো না। ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের নির্বাচন কীভাবে হবে সেটা নির্ধারণ করবে সংবিধান। আমরা তত্ত্বাবধায়ক মানি না। তত্ত্বাবধায়ক এখন মরা লাশ, ওই লাশ এখন আমাদের দিয়ে লাভ নেই। এই বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়কের ইতিহাস জানা আছে। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে ‘টেনশন, উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠা’ কোনো কিছুই নেই। বরং তিনি মনে করেন, কেউ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার চিন্তা করলে এটি তাদের জন্য চিন্তার বিষয় হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে ‘টেনশন, উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠা’ কোনো কিছুই নেই। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া ব্যক্তিদের সংখ্যা খুব একটা বড় নয়- এমন ধারণাই যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন থেকে দেয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে তারা কথা বলবেন বলেও জানান।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত